ads


বাংলাদেশ পুলিশে পদোন্নতি এবং পদায়ন নিয়ে অস্থিরতা

 


বাংলাদেশ 
পুলিশে পদোন্নতি এবং পদায়ন নিয়ে অস্থিরতা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের ফলে ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থার পুনর্গঠন এখনো সম্পন্ন হয়নি। পূর্ববর্তী সরকারের আস্থাভাজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আত্মগোপনে চলে গেছেন এবং কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, অনেককে বদলি করা হয়েছে। এই অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বদলি, পদায়ন এবং পদোন্নতির কারণে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে।

বিএনপি সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত এবং শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত পুলিশ কর্মকর্তাদের কিছু অংশ এখন পুলিশ সদর দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। তারা নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কারা কোথায় বদলি হবে এবং কারা পদোন্নতি পাবেন, তা নির্ধারণ করতে চান। একইসঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত এবং আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক কর্মকর্তাদের ব্যাচভিত্তিক তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যা পেশাদার কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করেছে।

অনেক কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, পদোন্নতিবঞ্চিতদের মধ্যে কিছু যোগ্য ব্যক্তি আছেন, তবে কিছু অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে তারা পদোন্নতি পাননি। বর্তমানে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ রাজনৈতিক যোগাযোগ ব্যবহার করে চাপ সৃষ্টি করছে, যার ফলে পুলিশ সুপার (এসপি) পদ থেকে সরাসরি ডিআইজি পদে পদোন্নতির প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। অনেক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন কম গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে হতাশ হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যেও জড়িয়ে পড়েছেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘকাল বঞ্চিত থাকা কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতির বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তার আগে আমরা সংশ্লিষ্ট জায়গার দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে অতীত রেকর্ড ভালো, দায়িত্বশীল ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে, পুলিশি ব্যবস্থার পুনর্গঠন এবং মনোবল ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে পুলিশ পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ। বঞ্চিতদের পদায়ন-পদোন্নতির চাপের পাশাপাশি, দীর্ঘদিন মানুষের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নে যুক্ত কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবিও জোরালোভাবে উঠেছে।

ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো বলছে, শেখ হাসিনার সরকারের ১৫ বছরে পুলিশ বাহিনীতে ব্যাপকভাবে দলীয়করণ হয়েছে এবং পুলিশকে বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি দমনের জন্য ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ফলস্বরূপ, শেখ হাসিনার পতনের সঙ্গে সঙ্গেই আইজিপি থেকে শুরু করে সকল স্তরের কর্মকর্তারা কর্মস্থল ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হওয়ার পর, পুলিশ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরছে। গত বৃহস্পতিবার নাগাদ দেশের সব থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে, যদিও নিরাপত্তার জন্য সেনাবাহিনীকে নিয়োগ করতে হয়েছে।

তবে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে পরিদর্শনে যেতে দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রভাবশালী হয়ে ওঠা কর্মকর্তাদের অনেকেই নিজে এবং ঘনিষ্ঠজনদের জন্য ভালো পদ নিশ্চিত করতে ব্যস্ত রয়েছেন। এ কারণে সামগ্রিক শৃঙ্খলা ফেরাতে উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের অভাব রয়েছে।

নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম জানান, পর্যায়ক্রমে দেশের থানাগুলোতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিদর্শনের পরিকল্পনা রয়েছে।

Post a Comment

0 Comments